
প্রথম পর্ব
রাজস্থানের রনদেও রাওয়ের প্রাসাদ আজ আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। প্রতিটি খিলান, প্রতিটি ঘর ফুলে, আলোতে ঝকমক করছে। চারিদিকে হইচই, হাসির শব্দ। আজ যে রনদেও রাও এর ছেলের দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম বিয়ের থেকেও এই বিয়ের জৌলুশ অনেক বেশি।
আমি আজ আমন্ত্রিত এখানে। রনদেও রাও এর ছেলে বাসুদেও রাও এর প্রথম বিয়েতেও এসেছিলাম।
ও বলা হয়নি আমি প্রসূন রায়, ইন্টেরিয়র ডেকরের্টস। নিজস্ব ব্যবসা। বর্তমানে ভালোই জমে উঠেছে। এক বছর আগে এক ক্লায়েন্টের মাধ্যমে বাসুদেও রাও এর প্রথম স্ত্রীর আবদারে তার অংশটি আধুনিক ভাবে সাজানোর জন্য এখানে আসি। উনি খুব সুন্দরী, বিদুষী মহিলা ছিলেন। কী ভাবে যে উনি হঠাৎ করে মারা গেলেন জানি না।সবাই বলে হার্টফেল। অমন সুস্থ মহিলা….. যাক গে আমার কি!!! আমি তো এসেছি আবার দ্বিতীয় স্ত্রীর জন্য নতুন করে সাজাতে।
বাড়ির একমাত্র মেয়ে নন্দিনীর সাথে তার খুব অন্তরঙগতা ছিল।আজ তাই নন্দিনীর মুখ থমথমে। হয়তো তার মৃতবৌদির কথা খুব মনে পড়ছে। কেনো জানি মনে হয় আমার, যে এই প্রাসাদের আনাচে কানাচে রহস্য লুকিয়ে আছে। বাসুদেও রাও একটু বোহেমিয়ান ধরণের। এক নারীতে ওনার মন ভরে না।আমার সাথে নিয়মিত ফেবু, ওয়াটস আপ এ যোগাযোগ আছে। কলকাতায় এলে আমাদের দেখা সাক্ষাৎ হয়।
বিয়ের সব কাজ মিটে গেছে। রাতে এখানেই থাকব, খাবো,যতদিন কাজ চলবে।
শুতে যাবো, হঠাৎ এ বাড়ির খাস চাকর মোতিরাম এসে বলল,”বাবু আপকো ছোটেসাব বুলা রহে হ্যায়।”
আর কী! কর্তার হুকুম। যেতেই হবে। গিয়ে দেখি বাসুদেও ইয়ার দোস্তদের নিয়ে মদের আসর বসিয়েছে।
“আরে প্রসূন বাবু, আসুন আসুন। আপনার কোথাই তো ভাবছিলাম, বোসেন, বোসেন”।
বসলাম। ওনার পাশে ওনার প্রিয় বন্ধু রনজয় ওরফে রকি।
” আরে রকি শুন্ শুন্, প্রসূনবাবু ফেবুতে শের শ্যায়রি ভি লেখেন। ওনার বহুত ফ্যানভি আছে”।
“কী যে বলেন, ওই আর কী,টাইম পাস।”
“অউর যো খুবসুরত আউরত লোগ হ্যায় ও ভি টাইম পাস?” বলে সে কী হাসি।
আমি খুবই বিব্রত হলাম। চিন্তায় পড়লাম হঠাৎ আমার ফেবুর কবিতা, অনুগামীদের নিয়ে পড়লেন কেনো, বিশেষ করে মহিলাদের নিয়ে।
“তো আপনার ফ্যানদের মধ্যে এক চিকনী চামেলী আছে না, এ রকি বোল না ক্যায়া নাম হ্যায়, হাঁ, প্রিয়া, প্রিয়া গুপ্তা?”
আমার মাথায় যদি বাজ পড়ত তাহলেও এত অবাক হতাম না। শেষ পর্যন্ত প্রিয়া!!!
এদিকে বাসুদেও বকেই চলেছে। “শোনেন, প্রসূনবাবু, আমি আপনার ওই প্রিয়া কে চাই। কুছু কোরেন, যত টাকা লাগবে দেবো,কিন্তু ওকে আমার চাই।”
এবার আমি আর থাকতে না পেরে বলে উঠলাম,” কী বলছেন আপনি, প্রিয়া বিবাহিত, এক বাচ্চার মা আর ও কোনমতেই রাজী হবে না। ভদ্র, রক্ষণশীল পরিবারের মহিলা। এসব পছন্দ করে না।”
“পছন্দ করে না, আপনি কোরাবেন।আপনার তো খুব ভক্ত। উসকো বোলিয়ে যে হাম খুশ করদেঙগে।”
“প্রিয়ার টাকা পয়সার উপর কোনো লোভ নেই।” আমি করুন মুখে বললাম।
“আপনার উসসে কোই লেনা দেনা নেহি। আপনি আপনার স্ত্রী, বাচ্চা নিয়ে সুখে ঘর কিজিয়ে না, হাম ভি প্রিয়াকে সাথ কুছু সুখ কর লেতে হ্যায়।” আমি তাও চুপ করে আছি দেখে বাসুদেও রাও কঠিন মুখে বলে উঠলেন,” দেখিয়ে বাবু আপকা কাম হ্যায় সিরিফ প্রিয়াসে মুলাকাত করানা, বাকি কাম আমার।নেহিতো আপকা ব্যাবসা, পরিবার সব খতম।” আগলে মাহিনেমে কলকাতা যায়েঙগে, তব প্রিয়া সে মিলেঙগে।”
জানোয়ারটার কথা শুনে মেরুদন্ড দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত প্রিয়া, আমার প্রিয়া, তাকে নিজের হাতে ওই পশুটার হাতে তুলে দিতে হবে! এবার রকি বলে উঠল,” আপ ইতনা কিউ চিন্তা করতে হ্যাঁয়? আপকা কুছু আছে নাকি?”
আমি মাথা নেড়ে না বলে নিজের শোওয়ার ঘরে চলে এলাম। প্রিয়া আমার প্রেমিকা। হ্যাঁ, আমার অবৈধ প্রেম।
দ্বিতীয় পর্ব
আমি বরাবরই একটু উচচকাঙখী। বাঁধাধরা চাকরি কখনই পোষায় নি। সুঠাম, স্মার্ট আমি কলেজ থেকেই মেয়েদের হার্টথ্রব ছিলাম। খুব তাড়াতাড়ি শুরু করলাম নিজস্ব ইন্টেরিয়র ডেকরেটর্সের ব্যবসা। এই সময় প্রেম করতাম এক বড়লোক বাপের একদম লুম্পেন মেয়ের সাথে। একদিন সে তার বাড়িতে নিয়ে গেল। সেই রাতে সে প্রথম সহবাসের সুখ দিল। নারী শরীর ভোগ করলাম প্রথম। মাঝরাতে দেখি সে পাশে নেই। খোঁজ করতে দেখি বাড়ির কাজের লোকের সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত। রাগে ঘৃণায় গা রি রি করে উঠেছিল। সেই সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে বুঝেছি যৌনতাকে উপভোগ করতে হয় আর এটাকে ব্যবহার করে অনেক দূর যাওয়া যায়। আমিও করেছি, উপভোগ করেছি উদ্দাম যৌনতা, কিন্তু মানসিক তৃপ্তি পাইনি কখনো। অনেক সম্পর্কে জড়িয়েছি। শেষ পর্যন্ত বিয়ে ঠিক হল সুলেখার সাথে। বাবা মাই ঠিক করলেন।ঠিক এই সময়ই ফেবুতে প্রথম দেখি প্রিয়াকে। আমি তখন কবিতা লিখতে শুরু করেছি। ফেবুতে সুলেখার সাথে কথা আর তার ফাঁকে কবিতা। আমার কবিতার খুব ভক্ত ছিল প্রিয়া। প্রথম দেখাতেই এক অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব করি। খুব গোলাপ ভালবাসত।ইনবক্সে অনেক কথা হতো আমাদের। প্রিয়া ছিল চিত্রশিল্পী। খুব খেয়ালী।বিবাহিত জীবনে সুখি ছিল না।ভালবাসার চির ভিখারী। আমি একদিন সরাসরি ওকে বলে দিলাম ” ভালবাসি তোমায় “।সে নাকচ করে দিল। বলল সে বিবাহিত, এক বাচ্চার মা।৷ কিন্তু আমারও জেদ প্রবল। হ্যাঁ বলিয়েই ছাড়ব। আমি বুঝতে পেরেছিলাম সেও আমায় ভালবাসে। মুখে প্রকাশ করতে পারছে না সমাজের ভয়ে। মাঝখানে আমি খুব অসুস্থ হয়েছিলাম। তখন প্রিয়া পাগলের মত আমার খোঁজখবর নিত। খুব চিন্তা করত আমার জন্য। স্বীকার করেছিল আমায় সে প্রচন্ড ভালবাসে। বেশ কেটে যাচ্ছিল আমাদের। আমরা আমাদের সব গোপন খবর, মনের কথা বলতাম। এদিকে সুলেখার সাথে প্রেমও জমে ক্ষীর। প্রিয়া কি করে বুঝে গেছিল। একদিন চাপ দিয়ে সব আমার থেকে জেনে গেল।খুব আঘাত পেয়েছিল।আমি ওকে বোঝাতে পেরেছিলাম, সেও তো বিবাহিত । আমিও যদি বিয়ে করি অসুবিধাটা কোথায়! বড় অভিমানী ছিল। কেন জানি না ওর ওপর আমার একটা আধিকারবোধ ছিল। ওর শরীর, মন মনে হত শুধু আমার। আমরা দেখা করতাম কখন প্রিন্সেপ ঘাটে, কখন বই পাড়ায়, কখন সিনেমা হলে। জোড় করে শরীর ছুঁয়েছি। বাধা দিলে বলেছিলাম, ” আমার জিনিস আমি ছোঁব।” লজ্জায় মাথা নত করে থাকত।
এর মধ্যে বিয়ের দিন এগিয়ে আসায় ব্যস্ত হয়ে গেছিলাম। সময় দিতে পারছিলাম না। প্রিয়া পাগলের মতো ফোন করত, অভিমান করত। ফেবু বন্ধ করে দিয়েছিল।আমি ভেবেছিলাম দুইদিন বাদে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, যখন সাত দিন হয়ে গেল তখন আমি আর থাকতে না পেরে ফোন করেছিলাম। অনেকবার কাটার পর ধরল।
“কী হল কী, ফোন কাটছ কেনো? “
উত্তরে অভিমানী স্বরে বলল, ” কী দরকার বলুন?”
” বাবা, একেবারে বলুন, কালকে আমার সাথে দেখা করবে।”
” না, একদম না। আপনার সাথে আর কোনো কথা নেই আমার। আপনি আপনার সুলেখার সাথে দেখা করুন।”
এবার আমি রেগে গেছিলাম এতদিন আমায় ছেড়ে, তার উপর আপনি করে বলা হচ্ছে।
” আমি কোনো কথাই শুনতে চাই না। তুমি কাল সকাল আট টার সময় চৌরাস্তার মোড়ে আমার জন্য দাঁড়াবে, কাজ আছে”।
প্রিয়াও রেগে ছিল। ” না, একদম না, কখনও না”।
এবার আমি মোক্ষম অস্ত্রটা দিয়েছিলাম। ” কেনো বর আসতে দেবে না বুঝি, কোলে বসিয়ে সারাক্ষণ আদর করছে তাই আসবে না। না এলে দেখ। হাতে সময় নিয়ে আসবে”। বলেই ফোন কেটে দিয়েছিলাম।
পরদিন সকাল ৮টার সময় গিয়ে দেখি ঠিক দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ বসে গেছে।সারা রাত মনে হয় চিন্তা করেছে আসবে কি আসবে না।আমি গিয়ে বলেছিলাম “চলো”।
” কোথায় যাবো?”
“যেখানে নিয়ে যাবো। যদি না যাও, জোড় করব কিন্তু এই রাস্তায়।” বলে একটা ডায়মন্ড হারবারগামী বাস ধরেছিলাম। প্রিয়া বুজে গেল কি করতে চাইছি।
ভয় পেয়ে বলল, ” একদম আমার ধারেকাছে থাকবে না, ছোঁবে না আমায়। “
আমি কিছু না বলে চুপ করে ছিলাম। ওখানে পৌঁছে অনেক বুঝিয়েছিলাম, হাত ধরতে গেলে ছিটকে সরে গেছিল।
“সব শেষ হয়ে গেছে, আমি শেষ হয়ে গেছি। আমাকে আমার মত থাকতে দাও।”
” কেন, মনে হচ্ছে বর খুব ভালবাসছে। আদর করছে বুঝি খুব।”
শুনে খুব রেগে গেছিল। আমিও তো আজ ওকে ছাড়বো না। নিজের করে নেবই। দরকার হলে জোড় করব। আমি প্রিয়াকে বলেছিলাম,” আমার শরীরটা খারাপ লাগছে, আমি বসতে পারছি না।”
শুনে ছুটে এসেছিল, শক্ত করে হাত ধরে বলেছিল, ” কি হবে এখন, কোথায় রেস্ট নেবে?”
“চল, সামনের রিক্সাওয়ালাকে বলি একটা ভালো হোটেলে যদি কয়েক ঘন্টার জন্য ঘর পাওয়া যায়। “
রিক্সা করে একটা ভাল হোটেলে গিয়ে শুয়ে পরেছিলাম। প্রিয়া বিষন্ন মুখে কাছে এসে বলেছিল, “খুব শরীর খারাপ লাগছে, ওষুধ এনে দেব?”
“হ্যাঁ লাগবে ওষুধ ” বলে ওকে জড়িয়ে খাটে শুইয়ে দিয়েছিলাম। ব্যাপার বুঝে ছটফট করতে লেগেছিল। প্রানপন বাঁধা দিয়েছিল। শুনি নি সেদিন ওর কোন কথা, মানিনি কোন বাঁধা। প্রিয়া আমার, নিজের করে নেবই। রাগ আর জেদের বশে একদম বন্য হয়ে গিয়েছিলাম। রক্তাক্ত করে দিয়েছিলাম ওর নরম ঠোঁট। জোর করেই একপ্রকার ওর শরীরে প্রবেশ করেছিলাম। নিজের ভালবাসার মানুষের সাথে যাক করা উচিত না তাই করেছিলাম। পশুর মতো আঁচড়ে, কামড়ে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছিলাম ওর নরম শরীরটাকে। আমার পৌরষের কাছে হার মেনে যন্ত্রনায় কুঁকড়ে গেছিল। সব শান্ত হয়ে যাওয়ার পর ওর দিকে তাকিয়ে খুব কষ্ট হয়েছিল। নিজের উপরেই খুব রাগ হয়েছিল। বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে sorry বলেছিলাম।খুব কেঁদেছিল। আমার চোখেও জল এসেছিল। আরও চেপে ধরেছিলাম বুকের মধ্যে। কি বুঝেছিল কি জানি,হঠাৎ মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে আমার চোখে জল দেখে আমার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে ছিল। তারপর আমার চোখে, নাকে, গালে। আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম, অদ্ভুত একটা অনুভূতি, অদ্ভুত শান্তি। একটা ভাললাগার আবেশ আমার সারা শরীরে ছড়িয়ে পরেছিল। দু হাতে প্রিয়ার নগ্ন শরীরটাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। আলতো করে কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে আমার বহু আকাঙখিত শব্দটি বলে উঠেছিল, ” ভালবাসি তোমায়। ” নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরেছিলাম, এক অদ্ভুত ভাললাগায় দুইজনে হারিয়ে যেতে থেকেছিলাম। দুইজনের ঠোঁট মিলে মিশে এক হয়ে গেছিল। আদরে ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিল, যে ভালবাসা আমি কারোর কাছে পাইনি। পুর্ণ সমর্পন বোধহয় একেই বলে। দুইজন দুইজনকে ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিলাম।
সেই দিনটার কথা আজ ভীষণভাবে মনে পড়ছে।
বিয়ের পর সংসারের চাপে আমাদের যোগাযোগ কমে গেছিল। আর কোন অভিযোগ করত না ও। আস্তে আস্তে কখন যেনো আমার জীবন থেকে নিজেকে সড়িয়ে নিয়েছিল। আমার ব্যবসা বড় হল। বাচ্চা হল। প্রিয়ার ছবিও বিভিন্ন দিকে প্রদর্শিত হতে লাগল। আজ যোগাযোগ বলতে আমার কবিতায় সবার আগে ওর কমেন্ট আর লাইক।
আজ খুব কষ্ট হচ্ছে , কী করে ওই জানোয়ারটার হাতে প্রিয়াকে তুলে দেব। দিতে তো হবেই। নইলে……..
আগে তো আমার পরিবার, ব্যবসা। তারপর না হয় প্রিয়া…..।।।
তৃতীয় পর্ব
তাড়াতাড়ি কলকাতা ফিরতে হল বাসুদেও রাও এর তাড়ায়। ফিরে এসেই প্রিয়াকে ফোন করলাম। ফোন ধরল না। মেসেজ পাঠালাম দেখা করার জন্য। খুব দরকার। সন্ধ্যেবেলা প্রিয়া ফোন করল,” কী ব্যাপার, হঠাৎ, এতদিন পর মনে পড়ল?”
“মনে তো সবসময় পড়ে জান্। কিন্তু ব্যস্ত থাকায়, সংসারের চাপে সবসময় হয়ে ওঠে না। যাই হোক, একবার দেখা করতে পারবে? খুব ইচ্ছা করছে তোমায় দেখতে। প্লিজ না বোলো না। “
“ঠিক আছে, তাহলে বই পাড়ায়, বিকেল চারটে।”
পরদিন বিকেল চারটের সময় কফি হাউসের সামনে আমরা দেখা করলাম।খুব সুন্দর লাগছিল হলুদ রঙের ঢাকাই শাড়িতে। কেন যে আজ সাজতে গেল। আজই তো জানোয়ারটা আসবে। তাইতো দেখা করতে বললাম। আমি গিয়ে হাতটা শক্ত করে ধরলাম। হাত ছাড়িয়ে নিল না।
“এত কেন সেজেছ, সবাই হাঁ করে দেখছে।” আমি বললাম।
“কেনো তোমার বুঝি হিংসে হচ্ছে? বল হঠাৎ তলব কেন?”
“বলব, সব বলব, আগে চলো কফি হাউসে বসি।”
দুজনে কফি হাউসে বসলাম।আর একটু পর তো বাসুদেও আসবে। তার আগে একটু ভালো করে দেখেনি ওকে।দুটো কফি বললাম। কিছুক্ষণ বাদে পরিকল্পনা অনুযায়ী বাসুদেও রাও এল।দারুন রেল্লা দিয়ে এসেছে আজ।
” আরে প্রসূনবাবু যে, এখানে?” বাসুদেও আড়চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল।
” আরে বাসুদেওজী আসুন, আসুন৷ আপনি এখানে? বসুন, বসুন।”
এই আকস্মিক আগমনে প্রিয়া বিব্রতবোধ করতে থাকলে আমি বললাম, ” প্রিয়া ইনি হলেন বাসুদেও রাও, রাজস্থানের এনার প্রাসাদে ইন্টেরিয়রের কাজ করছি।”
“বাসুদেওজী ইনি হলেন আমার বান্ধবী প্রিয়া, উনি একজন পেন্টার, চিত্রশিল্পী। “
“নমোস্কার, নমোস্কার, পরিচয় হয়ে খুব ভাল লাগল। আপনি যখন চিত্রশিল্পী , আর প্রসূনবাবুর পরিচিত, তখন একটা অনুরোধ করব আপনাকে।” লম্পটটা একদৃষ্টে প্রিয়াকে চোখ দিয়ে চাটছিল।
“বলুন কী বলবেন?”
“বোলছি, আপনিও জয়পুরে আমার প্রাসাদে আসুন না, actually, আমার বাপ দাদার কয়েকটি ছবি নষ্ট হয়ে গেছে। আমি চিত্রকর খুৃঁজছিলাম, ছবিগুলি আবার ঠিকঠাক করে আঁকার জন্য। আপনি যখন ওই লাইনেরই লোক, তাহকে ওগলো নতুনভাবে কোরিয়ে দিন। প্রসূনবাবুও ওখানে আছেন। একইসাথে সোব কাজ হয়ে যাবে তা হলে।”
“আমি জয়পুরে! না বাসুদেওজী, আমার হবে না, আমার বাড়ি থেকে অনুমতি দেবে না।”
বাসুদেও অনড়ভাবে বলল,” ঠিক আছে, আপনি আমায় আপনার ফোন নাম্বার দিজিয়ে, হাম বাত কর লেঙগে আপকে ঘরওয়ালোসে।”
প্রিয়া অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফোন নাম্বার দিল।বাসুদেও এক কাপ কফি শেষ করে আমাকে ইশারা করে বেড়িয়ে গেলো।
প্রিয়াকে বললাম, ” রাজি হয়ে যাও। দুজনে কিছুদিন একসাথে থাকতে পারব। নিবিড় করে দুজন দুজনকে পাবো। “
” ক্ষেপেছ তুমি, বাড়িতে ছোট ছেলে। আর রাতুল পারমিশন দেবে?”
আমি বললাম,” প্রচুর টাকা দেবে কিন্তু, দেখ, ওই টাকার লোভেই রাতুল রাজি হয়ে যাবে। শালা তো টাকা ছাড়া কিছু চেনে না।” প্রিয়ার হাতটা চেপে ধরলাম, ” প্লিজ সোনা, রাজি হয়ে যাও।তোমায় পেতে চাই আমি। ওনার বাবা, মা, বোন, বউ সবাই আছেন ওখানে। বাসুদেওজী ভালো মানুষ। মহিলাদের যথেষ্ট সন্মান দেন। “
প্রিয়া নিমরাজী হয়ে চলে গেল। বাসুদেও ছাড়ার পাত্র না। ফোন করে প্রিয়ার বর রাতুলের সঙগে কথা বলল। পাঁচ লাখ টাকা দেবে বলল। রাতুল সঙগে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল। তবে প্রিয়া বলল যে সে ছেলেকে নিয়ে যাবে। খুব আড়াতাড়ি প্লেনের টিকিটের ব্যবস্থা করে তিনদিন বাদে প্রিয়া তার ছেলে জোজোকে নিয়ে আমি রওনা দিলাম জয়পুরের দিকে।
চতুর্থ পর্ব
আজ এসে পৌঁছলাম। প্রাসাদ দেখে তো প্রিয়া অবাক। জোজো তো মার কাছ ছাড়া কিছুতেই হচ্ছে না। আমার একদিকে প্রিয়াকে পাব বলে আনন্দ হছে, অন্যদিকে দুঃশ্চিন্তা। কী করে ওকে রক্ষা করবো! ও তো একেবারে বাঘের গুহায় চলে এসেছে। আজ পুরো বিশ্রাম।
আজ সকাল সকাল প্রিয়াকে প্রাসাদ দেখাতে বের হলাম। কাজের সুত্রে আর পুর্ব পরিচিত বলে মহিলা মহলেও আমি যেতে পারতাম।ওখানে নন্দিনীর সাথে দেখা হল। নন্দিনী এক দৃষ্টে প্রিয়াকে দেখতে থাকল। দৃষ্টিতে রাগ, ভয় দুই ছিল। প্রিয়া ঘুরতে ঘুরতে বাসুদেও রাওয়ের আগের স্ত্রীর ছবির কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ছবিটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকল।
“ইনি কে?”
উত্তরটা নন্দিনী দিল, ” আমার ভাবিজী। যো জিন্দা নেহি হ্যাঁয়।” নন্দিনী শান্তিনিকেতনে অনেকদিন পড়াশুনা করেছেন অনেকদিন। তাই বাংলাটা ভালই বলতে পারেন।একথা সেকথার পর দেখলাম নন্দিনী আর প্রিয়া নিজেদের মধ্যেই বকবক করতে লাগল। আমাকে আর গাইডের কাজ করতে হল না।নন্দিনীই সব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগল দেখে আমি আমার কাজে চলে গেলাম।
রাতের বেলা ভাবলাম কাল থেকে তো প্রিয়ার কাজ শুরু, আজ রাতটা প্রিয়ার সাথে যদি কাটাতে পারতাম। যেমন ভাবা, মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম রাত বারটায় যাবো ওর ঘরে।
ঠিক রাত বারোটায় আমি ওর ঘরের দরজা নক্ করলাম। দরজা খুলে বন্ধ করতে না করতেই ওকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিলাম। সারারাত ধরে দুটো পিপাসার্ত শরীর মিলে মিশে এক হয়ে গেল। আশচর্য মাদকতা ওর শরীরে। নেশা ধরিয়ে দেয়। এক মিনিটের জন্যও ওকে ছাড়লাম না। চেপে ধরে রইলাম। কখনও বন্যতায়, কখনও ভালবাসায় দুইজন দুইজনের মধ্যে ডুবে গেলাম। ভোর হওয়ার আগেই ওর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু বুঝতে পারলাম না যে কেউ আমায় লক্ষ্য রাখছে প্রতিক্ষণ।
পরদিন ঘরে বসে ডিজাইন করছি, তখন বাসুদেও রাও ঘরে এসে ঢুকল।
“শোনেন প্রসূনবাবু আপনার সাথে প্রিয়ার কি সোম্পর্ক আছে বোলেন তো? সচ্চ বাত বোলিয়ে।”
আমি হকচকিয়ে গেলাম, হঠাৎ এই কথা।
“কেনো বলুন তো? কী হয়েছে?”
” কাল রাত মে আপ প্রিয়াকে ঘর কিঁউ গ্যায়ে থে? ও হামারা হ্যায়। মেরে চিজমে কৌই হাত ডালে গা তো উসকে হাত হাম কাট দেঙগে।”
” আরে আমি প্রিয়ার আঁকা ছবি দেখতে গেছিলাম। সারাদিন তো সময় পাই না তাই। “
“ঠিক আছে, প্রসূন বাবু, আপ প্রিয়াকো, রাজি করায়ে,মেরে সাত বাহার যানেকে লিয়ে। উসকে পতিকো দো লাখ অ্যায়সে নেহি দিয়া।”
বলে গটগট করে বাসুদেও চলে গেল। প্রিয়া কাল রাতে বলেছিল যে বাসুদেও যখন তখন আসছে। কাজের থেকে অকাজের কথা বেশি বলছে। ছবির থেকে প্রিয়ার দিকেই মনোযোগটা বেশি।
আজ না হোক কাল রাতে একবার কথা বলতে হবে ওর সাথে।
আজ একবার দিনের বেলা খোঁজ নিলাম প্রিয়ার। জোজোর সাথে নন্দিনীর খুব ভাব হয়ে গেছে। এমনকি বাসুদেওর এই দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথেও ভাব হয়ে গেছে। প্রিয়া ওদের হাতে জোজোকে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে ছবি আঁকছে। প্রিয়ার এক আশ্চর্য ক্ষমতা আছে সবাইকে আপন করার। পরদিন বিকেলে দেখি বাসুদেও আর প্রিয়া দুজনে বাগানে ঘুরছে। বাসুদেও কী বলছে, প্রিয়া হেসে গড়িয়ে পড়ছে। ও তলে তলে এত! এত সহজে প্রিয়াকে বশ করে নিল। আজ রাতে একটা হেস্ত নেস্ত হবেই।
পঞ্চম পর্ব
আজ রাতে অধীর আগ্রহে প্রিয়া দরজা খুলল। আমি পাশ কাটিয়ে ঢুকে গেলাম ঘরে। জোজো ঘুমাচ্ছে। ঘরে রঙ আর ছবির ছড়াছড়ি। বাসুদেও রাওয়ের প্রতিকৃতি আঁকছে।
“হুমম, এত তাড়াতাড়ি । ” বলে উঠলাম অামি। পিছন থেকে প্রিয়া জড়িয়ে ধরল।
“কী তাড়াতাড়ি? “
“বাসুদেও এর সাথে এত কী হাসাহাসি তোমার? জানো না, বোঝো না লোকটা কি রকম?”
“জানি, কিন্তু আমি কাজের জন্য এসেছি, যদি দেখি অসভ্যতামি করছে চলে যাবো।” প্রিয়া গম্ভীর ভাবে বলল।
আমি প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার মনের দোলাচাল আমি জানি। আমি চাই না প্রিয়াকে ওই লোকটা কিছু করুক। কিন্তু বাঁধা তো দিতে পারব না।
প্রিয়া আজ আমায় আদরে আদরে পাগল করে দিল। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। রাগও হচ্ছিল প্রিয়ার উপর। বন্যভাবে প্রিয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। প্রিয়াও আজ একদম জংলি বিল্লী হয়ে গেল। প্রিয়া আমার পিঠে আঁচড়ে দিলো। প্রিয়ার নরম বুকে দাঁত বসিয়ে দিলাম। আজ প্রিয়াকে সামলাতে পারছিলাম না। আজ ও আমায় ক্ষতবিক্ষত করতে চাইছে।আমিও চাই আজ প্রিয়া আমায় আঁচড়ে কামড়ে শেষ করে দিক। শরীরের ক্ষত দিয়ে যদি মনের ক্ষতকে ঢাকা যেত। ঝড় শান্ত হওয়ার আগে প্রিয়া হঠাৎ আমার ঠোঁটে ঠোঁট এমন ভাবে মেশাল যেনো মনে হল আমার সমস্ত কষ্ট আজ ও সব শুষে নেবে।
সকাল হওয়ার আগেই চলে গেলাম নিজের ঘরে। বেলার দিকে কাজ করছি, হঠাৎ মোতিরাম এসে বলল,” বাবু ছোটেসাব আপকো বুলা রহে হ্যায়। “
গিয়ে দেখি বাসুদেও রাও বসে মদ গিলছে। চোখ দুটো লাল। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,” বোসিয়ে প্রসূন বাবু, আপকো ম্যায় এক বাত বোলে থে কে প্রিয়া মেরা হ্যাঁয়। উনাকে রাজী করান। আপনি তা না করে নিজেই মজা লুটে নিলেন!”
“কী বলছেন আপনি?”
“কী বোলছি? শালা হারামির বাচ্চা, দেখ তোবে।” বলে টেবিলে রাখা ল্যাপটপটা আমার দিকে ঘোরালো। কালকের রাতের আমাদের মিলনের দৃশ্যগুলি সব দেখাচ্ছে। তার মানে ঘরেতে CCTV ক্যামেরা লাগানো আছে। আমার তো হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল।
বাসুদেও সাপের মত হিসহিস করে বলে উঠল , ” কাল রাতের মধ্যে প্রিয়াকে আমার ঘরে দেখতে চাই। নেহিতো এ ভিডিও তেরে ঘরওয়ালিকে পাস ভেজ দেঙ্গে। আউর প্রিয়াকো হাম ছিঁড় ফারকে খা জায়েঙ্গে। আব নিকাল ইঁয়াসে।”
আমি চলে এলাম ঘরে। কী করব জানি না। প্রিয়াকে কী বলব। বেচারি খুব ভালবাসে আমায়। সারাদিন আর কাজ হল না। ঘরেই কাটিয়ে দিলাম চিন্তায়। সন্ধ্যের দিকে ঝড়ের মত প্রিয়া ঘরে এল। প্রচন্ড রেগে আছে। সরাসরি আমায় বলল,” তুমি এত নীচ জানতাম না। “
” কী হয়েছে বলবে তো? “
” তুমি আমায় বাসুদেও এর কাছে বিক্রি করেছ?” রাগে দুঃখে প্রিয়া বলে উঠল।
” কে বলেছে এসব বাজে কথা? আমি এত নীচ কাজ করতে পারি? আমি তোমায় ভালবাসি প্রিয়া।”
প্রিয়া বলল,” বাসুদেও আজ একটা নেকলেস নিয়ে এসে আমায় পড়াতে গেছিল। আমি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি।তখন রাগে জানোয়ারটা বলেছে আমি নাকি তোমার মত লোককে ভালবেসে ভুল করেছি। তুমি নাকি টাকার বিনিময়ে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছ। তুমি নাকি চাও আমি বাসুদেওর রক্ষিতা হয়ে থাকি।”
“প্রিয়া এসব সত্যি না। তুমি বিশ্বাস করো। আমি জানতাম লোকটার লোভ আছে তোমার উপর, তাই তোমায় বার বার মিশতে বারণ করেছিলাম৷ কাল রাতের ঘটনা ও ভিডিও করেছে। বলেছে ওদের কথা না শুনলে বাড়িতে বউয়ের কাছে পাঠিয়ে দেবে।”
প্রিয়া শান্ত হয়ে আমার কাছে এসে বসল।
“কী বলেছে লম্পটটা?”
“বলেছে তোমাকে ওর সাথে শুতে৷ না শুলে ভিডিওটা পাঠাবেই, আমার ব্যবসাও শেষ করে দেবে।”
প্রিয়া স্থির হয়ে বসে প্রশ্ন করল,” তুমি কী চাও?”
“জানি না। প্লিজ প্রিয়া রাজী হয়ে যাও, নইলে আমি শেষ হয়ে যাব। আমি আর এত টেনশন নিতে পারছি না।”
“কী বলছো তুমি? এ হয় না। চলো আমরা পালিয়ে যাই।” অসহায়ভাবে বলে উঠল প্রিয়া। “
“কোথায় পালাবে? পালাতে পারবে না। প্রাসাদে কড়া পাহারা আমাদের উপর। জানালা গলে পালাবো, সেখানেও নদী। সদ্য বর্ষা গেছে। প্রচন্ড বেগ নদীতে। কেউ বাঁঁচবো না।”
প্রিয়া কিছু বলল না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
আমি হাত জোড় করে বললাম, “প্লিজ প্রিয়া রাজী হয়ে যাও। দেখ মনটাই তো আসল, ওটা তো আমারই আছে। আমাকে তুমি বাঁচাও।”
প্রিয়া শান্তভাবে আমার হাত ধরে বলল, ” তবে তাই হোক মোর প্রিয়তম। নিজের সর্বস্ব দিয়ে তোমায় ভালবেসেছি। তাই সর্বস্ব দিয়েই তোমায় রক্ষা করবো। তোমার জন্যই নিজেকে বিলিয়ে দেবো, বিলীন হয়ে যাবো। সার্থক হবে আমার ভালবাসা।” বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
রাতের বেলা আমার মোবাইলে বাসুদেও মেসেজ পাঠালো। ” well done, কাল আমার সুহাগরাত।” পরদিন সূর্য উঠল, কিন্তু আমার জীবন তো অন্ধকার। খুব কষ্ট হচ্ছে। সময় আর কাটছে না। জানোয়ারটা ছিঁড়ে খুঁড়ে খাবে আজ প্রিয়াকে।
বিকেল বেলা প্রিয়া আমার ঘরে এল। খুব সুন্দর করে সেজেছে। এসে বলল, ” তোমার সাথে দেখা করতে এলাম। আজ রাতে বাসুদেওকে খুশী করে দেবো। তবে তোমার মুক্তি। ভাল থেকো।”কাছে এসে গভীরভাবে আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখল।
আজ রাত আর আমার কাটবে না। কেন কেন প্রিয়াকে তুলে দিলাম জানোয়ারটার হাতে। নিজের ভালবাসাকে নিজে মারলাম। খুব কষ্ট দিচ্ছে জানোয়ারটা। এর চেয়ে যদি নিজেকে শেষ করে দিতাম ভাল হতো। প্রিয়াকে যদি না নিয়ে আসতাম। কি করি আমি উফফ্…..”
ভোরের দিকে হালকা তন্দ্রা এসেছিল, মনে হল যেন প্রিয়া এসেছে। আস্তে আস্তে গরাদহীন জানালার কাছে এসে নীচে ঝাঁপ দিল।
“প্রিয়া………….” চিৎকার করে উঠে পড়লাম। না, কেউ কোথাও নেই।
হঠাৎ করে খুব হইহল্লার আওয়াজ শুনতে পেলাম। দরজা খুলে বেরলাম। সবাই দেখি দৌড়ে বাসুদেওজীর ঘরের দিকে যাচ্ছে। আমিও গেলাম। গিয়ে দেখি বাসুদেও অর্ধনগ্ন হয়ে শুয়ে আছে। কথা বলতে পারছে না, হাত পা নাড়াতে পারছে না। যেনো পক্ষাগ্রস্থ হয়েছে। জানালা দিয়ে হু হু করে নদীর জোলো হাওয়া ঘরে ঢুকছে। মেঝেতে একটা গোলাপ পরে আছে। কোথাও নেই প্রিয়া। এখানেই তো থাকার কথা তার। আমি দৌড়ে গেলাম ওর ঘরে। গিয়ে দেখি কেউ কোথাও নেই। জানালা হাট করে খোলা। ক্যানভাসে শুধু একটি লাল গোলাপ আঁকা,যার থেকে টপ টপ করে রক্ত পড়ছে।
আমি দৌড়ে মোতিরামকে ধরলাম।
” প্রিয়া ম্যাডাম কোথায়?”
” প্রিয়া ম্যাডাম? তাই তো রাতমে তো ছোটেসাবের ঘোরে ছিল।”
আমি আবার বাসুদেওজীর ঘরে ঢুকলাম। গিয়ে দেখি নন্দিনীর কোলে জোজো। ডাক্তার এসেছে। আমি নন্দিনীকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে প্রিয়ার কথা জিজ্ঞেস করলাম।
“প্রিয়াজী রাতমে আমার ঘরে এসে জোজোবাবাকে দিয়ে যায়। রাতে কুছু আওয়াজ শুনেছিলাম নদীতে কুছু পড়রার। আর তারপর জানি না।”
আজ তিন দিন হয়ে গেল। না, প্রিয়ার কোনো খবর পাইনি। আশে পাশে খবর নেওয়া হয়েছে। না কোন বডি ভেসে ওঠার খবর নেই। প্রিয়া যেনো বাতাসে উবে গেছে। বাসুদেও পক্ষাগ্রস্থ হয়ে গেছেন। হাত পা নাড়তে পারেন না, কথা বলতে পারেন না। বাসুদেওজীর ঘর থেকে প্রিয়ার শাড়ির টুকরো পাওয়া গেছিল।
আজ চলে যাচ্ছি কলকাতা। জোজো কিছুতেই গেল না আমার সাথে। ওর বাবা এসে নিয়ে যাবে। খবর পাঠানো হয়েছে। যাবার সময় নন্দিনী একটা চিঠি দিল আমায়। প্রিয়ার চিঠি। যেদিন আমি চলে যাবো, সেদিনই আমাকে দিতে বলেছিল নন্দিনীকে। চিঠিতে লেখা আছে………….
“প্রিয়
পারলাম না গো। এ শরীর তুমি ছাড়া কাওকে দিতে। তাই চির বিদায় নিলাম। খোলা জানালা দিয়ে নদীর বুকে আশ্রয় নিলাম। মনে রেখো, শুধু তোমায় বড্ড ভালবেসেছিলাম।
তোমার, শুধু তোমার
প্রিয়া
আমার প্রিয়া তবে আর নেই????
ও তো সাঁতার জানে না। হে ভগবান এ আমি কী করলাম। এ পাপের শাস্তি তো আমায় সারাজীবন পেতে হবে। প্রিয়া, আমার প্রিয়া তুমি আমায় ক্ষমা করো।।।।।।
শেষ পর্ব
আমি প্রিয়া……..
এখন সকাল হয়ে গেছে। আমি প্লেনে করে আয়ারল্যান্ড যাচ্ছি কেলীর কাছে। জোজোর জন্য মন কেমন করছে। বেচারাকে কদিন মা ছাড়া থাকতে হবে। আমি ওকে নিয়েই আসতাম। কিন্তু তাতে যে আমাদের পরিকল্পনা সফল নাও হতে পারত। অত উঁচু থেকে কী ও জানালা দিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিলে অক্ষত থাকতো! তাই ওকে রেখেই আমি ঝাঁপ দিয়েছিলাম। সবাই জানে আমি সাঁতার জানি না। কিন্তু কেউ জানে না যে শখের বশে বেশিদিন হয়নি আমি গোপনে সাঁতারের কোর্স করেছি। রাতুল জানলে তো মেরে ঠ্যাং খোঁড়া করে দিত। কাল রাতে কাজে দিল এটা। বাসুদেও কে যা শাস্তি দেওয়ার দিয়েছি। আর প্রসূন??? সে যে আমার জন্য সারাজীবন কাঁদবে।
বাসুদেওর উদ্দেশ্য আমি কলকাতা থাকতেই বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু প্রসূনকে তো বিশ্বাস করেছিলাম। যাইহোক রাতুল তো বাসুদেওর কাছে আমায় বিক্রিই করে দিয়েছিল। এমনিতেই এখানে না এলেও কিছুদিন বাদে রাতুলকে ছেড়ে জোজোকে নিয়ে আয়ারল্যান্ড পালিয়ে যেতাম। পাসপোর্ট, ভিসা সব হয়ে গেছিল। শুধু টাকা পয়সার জন্য আটকে ছিল। বাসুদেওর দৌলতে তাও হয়ে গেল।
কেলী আয়ারল্যান্ডে থাকে। বয়স্ক, বিবাহিত কিন্তু বড় একা। আমার সাথে তিন বছরের আলাপ। সব জানে আমার। অনেকবার বলেছে ওখানে চলে যেতে। সত্যি বলতে কি প্রসূনের জন্য যেতে মন চাইছিল না। কিন্তু আজ পরিস্থিতি বদলে গেছে। আজ নিজের জন্য, জোজোর জন্য আয়ারল্যান্ড যাচ্ছি। ওখানে আমার আঁকা ছবির খুব চাহিদা। আমি কুরিয়ার করে কেলীকে অনেক ছবি পাঠিয়েছি। ওগুলো সব ও বিক্রি করে আমার জন্য থাকার বন্দোবস্ত করেছে। একটা আঁকার স্কুল ঠিক করে রেখেছে। ছাত্রছাত্রীও জোগাড়। শুধু আমার যাওয়ার অপেক্ষা। না, এর বিনিময়ে কেলীকে কিছু দিতে হবে না। শুধু নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব।
প্রসূনের উদ্দেশ্য আমি রাজস্থানে এসে বুঝতে পারি। ওখানে প্রথম আলাপেই নন্দিনীর সাথে খুব ভাব হয়। নন্দিনী প্রসূনকে বিশ্বাস করতে বারণ করে। কিন্তু তাও ওর ভালবাসার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলাম। আমি তো নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবেসেছি। নন্দিনী জানায় তার প্রথম বৌদির মৃত্যু রহস্য। বাসুদেওর বোহেমিয়ান জীবনের প্রতিবাদ করার ফল স্বরুপ তাকে মরতে হয়। এখানে এক রকম গাছ গাছরা পাওয়া যায় যেটা থেতো করে রস বের করে সেই রস কোন কিছুর সাথে মাখিয়ে গন্ধ শোঁকালে সেই ব্যাক্তি যদি সম্পুর্ন সুস্থ হয় তবে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হবে আর হৃদয় যদি দুর্বল হয় তবে মৃত্যু অবধি হতে পারে। নন্দিনীর বৌদির তাই হয়েছিল। বাসুদেও এই দ্বিতীয় স্ত্রীর উপরও অত্যাচার শুরু করে দিয়েছিল। পশুর মতো ভোগ করত তাকে মানে কল্পনাকে। আমি আসার পর প্রথম প্রথম আমায় ভুল বুঝেছিল৷ পরে সব জানতে পেরে আমায় প্রচুর সাহায্য করে কল্পনা। কল্পনাও এখান থেকে মুক্তি পেতে চাইছিল। তখন আমরা তিনজন মিলে একটা পরিকল্পনা করি। প্রসূনকে নিয়েই চলে যাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু সে তো তার স্ত্রী, বাচ্চা, ব্যবসার জন্য আমাকেই জানোয়ারটার হাতে তুলে দিল। আমার ভালবাসার কোন মুল্য সে দিল না। এখন মনে হয় সে হয়তো আমার শরীরটাকেই শুধু ভালবেসেছিল। যদি আমাকে বাঁচাতে চেষ্টা করত তাহলে আজ ও আমার সাথে হতো। নিজের স্বার্থে আমাকে ও বাসুদেওর সাথে শুতে বলেছিল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বাসুদেওর অস্ত্রে ওকেই ঘায়েল করলাম। নন্দিনী সেই জড়িবুটি জোগাড় করে দিয়েছিল। সেটির রসে একটা গোলাপ রাত আটটা নাগাদ ভিজিয়ে রেখেছিলাম। বাসুদেও তো এসেই ঝাঁপিয়ে পরে আর কি। অনেক কষ্টে অনেক ছেনালি করে তবে গোলাপের গন্ধ শোঁকাতে পেরেছি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে খাটে শুয়ে পরে সে। আর পাপের শাস্তিও পেল একটু পরেই। জানি আমি সোজা পথে পালাতে পারব না। তাই নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালাই। নন্দিনীর প্রেমিক আমাকে ওখান থেকে বাইকে করে এয়ারপোর্টে নিয়ে যায়। জামাকাপড়, পাসপোর্ট, ভিসা সব নন্দিনী ওকে দিয়েই রেখেছিল।
আয়ারল্যান্ড গিয়ে একটু গুছিয়ে বসার পর, নন্দিনী জোজোকে নিয়ে চলে আসবে। নন্দিনীর প্রেমিক ছোট জাতের। নন্দিনীর পরিবার জানতে পেলে দুইজনকেই মেরে ফেলবে। তাই নন্দিনী আসার পর সেও চলে আসবে এখানে। দুইজনে বিয়ে করে আয়ারল্যান্ডেই সংসার পাতবে। কল্পনাও চলে আসবে। আমরা তিনজন মিলে একটা বুটিক খুলবো। স্বাধীনভাবে তিনজন থাকবো। বর্তমানে তাই আমরা এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। সেখানে শুধুই ভালবাসা না, সন্মানের সাথে, নিজেদের জন্য বাঁঁচবো। এক নতুন সূর্য উঠুক আমাদের জীবনে…….
সমাপ্ত